Wednesday, March 27, 2013

একলা চলো

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
একলা চলোএকলা চলোএকলা চলোএকলা চলো রে॥
যদি  কেউ কথা না কয়ওরে ওরে অভাগাযদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়--                  
তবে পরান খুলে তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে
যদি সবাই ফিরে যায়ওরে ওরে অভাগাযদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়--                  
তবে পথের কাঁটা তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে
যদি আলো না ধরেওরে ওরে অভাগাযদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে   দুয়ার দেয় ঘরে--                  
তবে বজ্রানলে আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে

Thursday, February 21, 2013

সোনার তরী

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা—
এ পারেতে ছোটো খেত,
আমি একেলা।

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দু-ধারে—
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।

 যত চাও তত লও তরণী-’পরে।
আর আছে?— আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে—
এখন আমারে লহ করুণা করে।

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই— ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।

-- রবীন্দ্রনাথ, সোনার তরী।