Friday, August 31, 2012

সীমা

সীমার মাঝে, অসীম, তুমি বাজাও আপন সুর, 
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর। 
তোমায় আমায় মিলন হলে সকলি যায় খুলে 
বিশ্বসাগর ঢেউ খেলায়ে উঠে তখন দুলে।
তোমার আলোয় নাই তো ছায়া, 
আমার মাঝে পায় সে কায়া,
হয় সে আমার অশ্রুজলে সুন্দরবিধুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর। 

Friday, August 24, 2012

আপন হৃদয় গহন দ্বারে

আমি কান পেতে রই
ও আমার আপন হৃদয় গহন দ্বারে, 
বারে বারে কান পেতে রই।

ভ্রমর সেথা হয় বিবাগী
নিভৃত নীলপদ্মলাগি। 
কোন রাতের পাখি গায় একাকী 
সঙ্গীবিহীন অন্ধকারে। 

কে সে মোর কেই বা জানে, 
কিছু তার দেখি আভা, কিছু পাই অনুমানে, 
কিছু তার বুঝিনা বা। 

মাঝে মাঝে তার বারতা 
আমার ভাষায় পায় যে কথা। 
ও সে আমায় বাণী পাঠায় জানি 
গানের তানে লুকিয়ে তারে, বারে বারে। 

Wednesday, August 22, 2012

ব্যাকুল মন

এ মন ব্যাকুল যখন, তখন
ডেকে যায় বারে বারে, 
তবু স্তব্ধতা এসে ধরা 
দেয় আমার বীণার তারে। 

জানিনা, জানিনা, জানিনা কি কারন। 

-- নচিকেতা। 

Friday, August 17, 2012

তোমায় গান শোনাবো

এল আঁধার ঘিরে,
পাখি এল নীড়ে,  
তরী এল তীরে। 
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো। 

আমায় পরশ করে,
প্রাণ সুধায় ভরে, 
তুমি যাও যে সরে।
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাকো। 
তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো। 

ওগো দুখজাগানিয়া
তোমায় গান শোনাবো। 

Thursday, August 16, 2012

সুরে সুর মেলাতে

আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
    তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে॥
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
    তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে॥
            এ তার বাঁধা কাছের সুরে,
            ঐ বাঁশি যে বাজে দূরে।
গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে
    বিশ্বহৃদয়পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে --
         তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে। 


-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পূজা পর্যায়ের গান। 

মায়া বন বিহারিণী

মায়াবন বিহারিণী হরিণী,
গহন স্বপন সঞ্চারিণী।
কেন তারে ধরিবারে করি পণ, অকারণ।

থাক থাক নিজমনে দূরেতে,
আমি শুধু বাঁশরীর সুরেতে
পরশ করিব ওর প্রাণমন, অকারণ।

চমকিবে ফাগুনের পবনে,
পশিবে আকাশবাণী শ্রবণে।
চিত্ত আকুল হবে অনুক্ষণ, অকারণ।

দূর হতে আমি তারে সাধিব,
গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব,
বাঁধনবিহীন সেই যে বাঁধন, অকারণ।।

-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শাপমোচন, ১৯৩৪

Wednesday, August 15, 2012

দুই পাখি

খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে, বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে, কী ছিল বিধাতার মনে।

বনের পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই,    বনেতে যাই দোঁহে মিলে।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি আয়,   খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।’
বনের পাখি বলে, ‘না,   আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   আমি কেমনে বনে বাহিরিব।’

বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি    বনের গান ছিল যত,
খাঁচার পাখি গাহে শিখানো বুলি তার—  দোঁহার ভাষা দুইমত।
বনের পাখি বলে ‘খাঁচার পাখি ভাই,   বনের গান গাও দেখি।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি ভাই,   খাঁচার গান লহো শিখি।’
বনের পাখি বলে, ‘না,   আমি   শিখানো গান নাহি চাই।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়   আমি  কেমনে বনগান গাই।’

নের পাখি বলে, ‘আকাশ ঘন নীল   কোথাও বাধা নাহি তার।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘খাঁচাটি পরিপাটি   কেমন ঢাকা চারিধার।’
বনের পাখি বলে, ‘আপনা ছাড়ি দাও   মেঘের মাঝে একেবারে।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘নিরালা কোণে বসে   বাঁধিয়া রাখো আপনারে।’
বনের পাখি বলে, ‘না,   সেথা   কোথায় উড়িবারে পাই !’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   মেঘে  কোথায় বসিবার ঠাঁই।’

এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে,    তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,   নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,   বুঝাতে নারে আপনায়।
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা—কাতরে কহে, ‘কাছে আয় !’

নের পাখি বলে, ‘না,   কবে    খাঁচায় রুধি দিবে দ্বার !’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   মোর  শকতি নাহি উড়িবার।’

-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সোনার তরী, ১২৯৯

Sunday, August 12, 2012

এক একটা দিন

এক একটা দিন মসৃণ,
ভোর থেকে শুরু করে রাতের শয্যায়।
এক একটা দিন উঁচুনিচু,
কেউ নিলে পিছু,
টোকা দিলে চুপিসারে কোণের দরজায়।

এক একটা দিন দারুণ রঙিন
প্রেমিকার ঠোঁট আর নিশানের লাল।
এক একটা দিন বড় বেরঙিন
অসুখের মত আসে আমার সকাল।

এক একটা দিন ঝড় ওঠে,
সূর্যকে গ্রাস করে বিশাল প্রলয়।
ডানা ঝাপটায় পাখি বন্ধ খাঁচায়।

এক একটা দিন রঙ বেরং ফেরারি,
ঝড়ের আঘাতে সব ভাঙে চুরমার,
বন্দী পাখিটা তার সাহসী ডানার
ঝাপটায় বলে এই ঝড় দরকারী।