Monday, October 8, 2012

কাঙালপনা


এক ফালি মেঘ, এক ফোঁটা জল, রঙ ধনুকের একটি কণা, 
একটি নিমেষ ধরতে চেয়েই আমার এমন কাঙালপনা। 

একটি ঘাসে একটু সবুজ, একটি মাটির রং মিশিয়ে, 
দুচোখ দিয়ে আঁকছি ছবি, স্বপ্ন দেখছি তোমায় নিয়ে। 

একটি দিনের একটি বিকেল, একটি ছাদের একটি কোণে, 
একটি মেয়ে আকাশটাকে মাখছে গায়ে, মাখছে মনে। 
সে দৃশ্যটাই ভাবতে ভাবতে সময় যখন অন্যমনা, 
সেই সময়ের শরীক হতেই আমার এমন কাঙালপনা। 

একটি বিকেল শেষ হল যেই,  একটি তারা উঠল জ্বলে। 
হয়ত তোমার জানলা খোলা সেই তারাটাই দেখবে বলে।  

তোমার চোখেই আলোকবর্ষ করবে যখন গান রচনা,  
তখন তোমার রাত্রি ছুঁতেই আমার গানের ... কাঙালপনা। 

কথা ও সুরঃ সুমন।

Wednesday, October 3, 2012

বিহঙ্গ মোর

যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে,
      সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া,
যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে,
      যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া,
মহা আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে,
      দিক্‌-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা--
           তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
                এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

এ নহে মুখর বনমর্মরগুঞ্জিত,
      এ যে অজাগরগরজে সাগর ফুলিছে।
এ নহে কুঞ্জ কুন্দকুসুমরঞ্জিত,
      ফেনহিল্লোল কলকল্লোলে দুলিছে।
কোথা রে সে তীর ফুলপল্লবপুঞ্জিত,
      কোথা রে সে নীড়, কোথা আশ্রয়শাখা!
           তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
                এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

এখনো সমুখে রয়েছে সুচির শর্বরী,
      ঘুমায় অরুণ সুদূর অস্ত-অচলে!
বিশ্বজগৎ নিশ্বাসবায়ু সম্বরি
      স্তব্ধ আসনে প্রহর গনিছে বিরলে।
সবে দেখা দিল অকূল তিমির সন্তরি
      দূর দিগন্তে ক্ষীণ শশাঙ্ক বাঁকা।
          ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
                এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

ঊর্ধ্ব আকাশে তারাগুলি মেলি অঙ্গুলি
      ইঙ্গিত করি তোমা-পানে আছে চাহিয়া।
নিম্নে গভীর অধীর মরণ উচ্ছলি
      শত তরঙ্গ তোমা-পানে উঠে ধাইয়া।
বহুদূর তীরে কারা ডাকে বাঁধি অঞ্জলি
      "এসো এসো' সুরে করুণ মিনতি-মাখা।
             ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
                   এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

ওরে ভয় নাই, নাই স্নেহমোহবন্ধন,
      ওরে আশা নাই, আশা শুধু মিছে ছলনা।
ওরে ভাষা নাই, নাই বৃথা বসে ক্রন্দন,
     ওরে গৃহ নাই, নাই ফুলশেজরচনা।
আছে শুধু পাখা, আছে মহানভ-অঙ্গন
     উষা-দিশা-হারা নিবিড়-তিমির-আঁকা--
          ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
                এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

Sunday, September 30, 2012

বন্ধু তোমার লাগি

এক জোনাকি, দুই জোনাকি, তিন জোনাকি ওড়ে
তোমার লাগি বন্ধু আমার মন যে কেমন করে।
এক প্রহর, দুই প্রহর, তিন প্রহর রাতি,
তোমার লাগি বন্ধু আমার ঘরে জ্বলছে বাতি।
এক পশলা, দুই পশলা, তিন পসলা ঝরে,
তোমার লাগি বন্ধু আমার পরান কাঁপে ডরে।
এক আশ্বিন, দুই আশ্বিন, তিন আশ্বিন গেল,
তোমার লাগি বন্ধু আমার বসন এলোমেলো।
এক পথিক ,দুই পথিক , তিন পথিক  আসে,
তোমার লাগি বন্ধু আমার ফিরায় শিউলি ঝরা মাসে।
এক যৌবন, দুই যৌবন, তিন যৌবন যায়
তুমিই যদি ভুললে বন্ধু আমার কি উপায়?   

Saturday, September 29, 2012

প্রিয়া মোর

ও বাতাস বলে দাও
প্রিয়া মোর রয়েছে কোথায়,

তার কবরীর গন্ধ এনে দাও।
অনুরাগে রাঙা তার ছোঁয়া যেন পাই।

Friday, September 28, 2012

পথের সাথী

বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও,
মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে ডেকে নিও,
ভুলো না তারে ডেকে নিতে তুমি ...

খুশির খেয়ালে পাল তুলে যেও চিরদিন,
হাসি আর গানে শোধ করে যেও যত ঋণ।
স্মৃতির পটেতে যত ব্যথা আছে ভুলে যেও,
ভুলো না তারে ডেকে নিতে তুমি ...

সমুখে রয়েছে পথ
চলে যাও চলে যাও
পিছনে যা কিছু টানে
ফেলে যাও ফেলে যাও

আলোর পরশে ভোর হয়ে যাবে এই রাত
কোন দিন ভুলে ছেড়ো নাকো তুমি এই হাত
ভুল হারানো দিনে তাকে তুমি সাথে নিও।
ভুলো না তারে ডেকে নিতে তুমি ...

Saturday, September 22, 2012

ঝির ঝির বাতাসে


এই ঝির ঝির ঝির বাতাসে
কি গান ভেসে আসে
সেই সুরে সুরে মন নাচে উল্লাসে।
তুমি কত দুরে
তবু এই সুরে
মনে হয় যেন তুমি আছো মোর পাশে।
জীবনে তাই আজ এত আলো
তোমারে যে বেসেছিগো ভাল।
তুমি আছো বলে
তারা দ্বীপ জ্বলে
মেঘের আড়ালে চাঁদ পাই যেন পাশে।
মেঘে মেঘে আজ এত খেলা
রং এ রং এ আজ তাই মেলা।
দূর হতে দূরে
হৃদয় যায় উড়ে
সোনালী স্বপন ভরা নীল নীল আকাশে।

Wednesday, September 19, 2012

স্বপনে

তোমায় ধরিতে চাহি, ধরিতে পারি নে,
তুমি গঠিত যেন স্বপনে - 
এসো হে। 

তোমারে বারেক দেখি, ভরিয়ে আঁখি, 
ধরিয়ে রাখি নয়নে। 

Friday, September 14, 2012

মন পাখি


ওরে মন পাখি
কেন ডাকাডাকি
তুই থাক না রে গোপনে
তোর উড়তে আছে মানা রে বন্ধু
এই খোলা আসমানে
উড়তে মানা আকাশে তোর
বসতে মানা ডালে
মনের মত বাসা বাঁধতেও মানা
কি আছে কপালে
বলি, ঝড়ে হারাতে তো মানা নাই !!!

Wednesday, September 5, 2012

আমার কথার ফুল

আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম, প্রিয়
আমার কথার ফুল গো,
আমার গানের মালা গো,
কুড়িয়ে তুমি নিও।

আমার সুরের ইন্দ্রধনু,
রচে আমার ক্ষণিক তনু, 
জড়িয়ে আছে সেই রঙে মোর 
অনুরাগ অমিয়। 

আমার হৃদয় পদ্ম ঘিরে, 
কথার ভ্রমর কেঁদে ফিরে। 
সেই ভ্রমরের কাছে আমার 
মনের মধু নিও। 

আমার কথার ফুল গো, 
আমার গানের মালা গো, 
কুড়িয়ে তুমি নিও। 

Monday, September 3, 2012

এতদিন কোথায় ছিলেন?

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত সন্ধ্যা আসে
ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল 
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল 
সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন। 
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার, ....  

Saturday, September 1, 2012

দেখো তো চেয়ে

মিনতি মম শুন হে সুন্দরী
আর এক বার সমুখে এসো প্রদীপ খানি ধরি। 
এবার মোর মকরচূড় মুকুট নাহি মাথে, 
ধনুকবাণ নাহি আমার হাতে। 
এবার আমি আনিনি ডালি দখিন সমীরণে, 
সাগরকূলে তোমার ফুলবনে। 

এনেছি শুধু বীণা। 
দেখোতো চেয়ে, আমারে তুমি চিনিতে পারো কিনা? 

-- রবীন্দ্রনাথ, সাগরিকা। 

গভীরে যাও

গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও
এই বুঝি তল পেলে, এই হারালে। 
প্রয়োজনে ডুবে যাও। 

নদীর বুকে, ঘরের খোঁজে,
কাটেনি দিন খুব সহজে |
বহু বছর মেখেছি রুপোর বালি |
সেই রুপোর লোভে বাড়ি ফেরা যাবে রসাতল |
আর ভেজা শরীর চোরা স্রোতে কামড়ে ধরে জল |

তাই গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও |
গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও |
এই বুঝি তল পেলে ফের হারালে, প্রয়োজনে ডুবে যাও |

কথা ও সুরঃ অনুপম রায়। 

Friday, August 31, 2012

সীমা

সীমার মাঝে, অসীম, তুমি বাজাও আপন সুর, 
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর। 
তোমায় আমায় মিলন হলে সকলি যায় খুলে 
বিশ্বসাগর ঢেউ খেলায়ে উঠে তখন দুলে।
তোমার আলোয় নাই তো ছায়া, 
আমার মাঝে পায় সে কায়া,
হয় সে আমার অশ্রুজলে সুন্দরবিধুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর। 

Friday, August 24, 2012

আপন হৃদয় গহন দ্বারে

আমি কান পেতে রই
ও আমার আপন হৃদয় গহন দ্বারে, 
বারে বারে কান পেতে রই।

ভ্রমর সেথা হয় বিবাগী
নিভৃত নীলপদ্মলাগি। 
কোন রাতের পাখি গায় একাকী 
সঙ্গীবিহীন অন্ধকারে। 

কে সে মোর কেই বা জানে, 
কিছু তার দেখি আভা, কিছু পাই অনুমানে, 
কিছু তার বুঝিনা বা। 

মাঝে মাঝে তার বারতা 
আমার ভাষায় পায় যে কথা। 
ও সে আমায় বাণী পাঠায় জানি 
গানের তানে লুকিয়ে তারে, বারে বারে। 

Wednesday, August 22, 2012

ব্যাকুল মন

এ মন ব্যাকুল যখন, তখন
ডেকে যায় বারে বারে, 
তবু স্তব্ধতা এসে ধরা 
দেয় আমার বীণার তারে। 

জানিনা, জানিনা, জানিনা কি কারন। 

-- নচিকেতা। 

Friday, August 17, 2012

তোমায় গান শোনাবো

এল আঁধার ঘিরে,
পাখি এল নীড়ে,  
তরী এল তীরে। 
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো। 

আমায় পরশ করে,
প্রাণ সুধায় ভরে, 
তুমি যাও যে সরে।
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাকো। 
তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো। 

ওগো দুখজাগানিয়া
তোমায় গান শোনাবো। 

Thursday, August 16, 2012

সুরে সুর মেলাতে

আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
    তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে॥
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
    তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে॥
            এ তার বাঁধা কাছের সুরে,
            ঐ বাঁশি যে বাজে দূরে।
গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে
    বিশ্বহৃদয়পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে --
         তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে। 


-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পূজা পর্যায়ের গান। 

মায়া বন বিহারিণী

মায়াবন বিহারিণী হরিণী,
গহন স্বপন সঞ্চারিণী।
কেন তারে ধরিবারে করি পণ, অকারণ।

থাক থাক নিজমনে দূরেতে,
আমি শুধু বাঁশরীর সুরেতে
পরশ করিব ওর প্রাণমন, অকারণ।

চমকিবে ফাগুনের পবনে,
পশিবে আকাশবাণী শ্রবণে।
চিত্ত আকুল হবে অনুক্ষণ, অকারণ।

দূর হতে আমি তারে সাধিব,
গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব,
বাঁধনবিহীন সেই যে বাঁধন, অকারণ।।

-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শাপমোচন, ১৯৩৪

Wednesday, August 15, 2012

দুই পাখি

খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে, বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে, কী ছিল বিধাতার মনে।

বনের পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই,    বনেতে যাই দোঁহে মিলে।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি আয়,   খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।’
বনের পাখি বলে, ‘না,   আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   আমি কেমনে বনে বাহিরিব।’

বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি    বনের গান ছিল যত,
খাঁচার পাখি গাহে শিখানো বুলি তার—  দোঁহার ভাষা দুইমত।
বনের পাখি বলে ‘খাঁচার পাখি ভাই,   বনের গান গাও দেখি।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি ভাই,   খাঁচার গান লহো শিখি।’
বনের পাখি বলে, ‘না,   আমি   শিখানো গান নাহি চাই।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়   আমি  কেমনে বনগান গাই।’

নের পাখি বলে, ‘আকাশ ঘন নীল   কোথাও বাধা নাহি তার।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘খাঁচাটি পরিপাটি   কেমন ঢাকা চারিধার।’
বনের পাখি বলে, ‘আপনা ছাড়ি দাও   মেঘের মাঝে একেবারে।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘নিরালা কোণে বসে   বাঁধিয়া রাখো আপনারে।’
বনের পাখি বলে, ‘না,   সেথা   কোথায় উড়িবারে পাই !’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   মেঘে  কোথায় বসিবার ঠাঁই।’

এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে,    তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,   নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,   বুঝাতে নারে আপনায়।
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা—কাতরে কহে, ‘কাছে আয় !’

নের পাখি বলে, ‘না,   কবে    খাঁচায় রুধি দিবে দ্বার !’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   মোর  শকতি নাহি উড়িবার।’

-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সোনার তরী, ১২৯৯

Sunday, August 12, 2012

এক একটা দিন

এক একটা দিন মসৃণ,
ভোর থেকে শুরু করে রাতের শয্যায়।
এক একটা দিন উঁচুনিচু,
কেউ নিলে পিছু,
টোকা দিলে চুপিসারে কোণের দরজায়।

এক একটা দিন দারুণ রঙিন
প্রেমিকার ঠোঁট আর নিশানের লাল।
এক একটা দিন বড় বেরঙিন
অসুখের মত আসে আমার সকাল।

এক একটা দিন ঝড় ওঠে,
সূর্যকে গ্রাস করে বিশাল প্রলয়।
ডানা ঝাপটায় পাখি বন্ধ খাঁচায়।

এক একটা দিন রঙ বেরং ফেরারি,
ঝড়ের আঘাতে সব ভাঙে চুরমার,
বন্দী পাখিটা তার সাহসী ডানার
ঝাপটায় বলে এই ঝড় দরকারী।